ফালুন দাফার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ফালুন দাফা(ফালুন গোংগ-ও বলে) হচ্ছে বুদ্ধ মতের এক উন্নত আত্ম-সাধনা পদ্ধতি। ফালুন দাফার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাস্টার লি হোংগ জি, যিনি এই পদ্ধতির মাস্টার। এই পদ্ধতিতে বিশ্বের উচ্চতম গুণগুলি - জেন, শান, রেন (সত্য, করুণা, সহনশীলতা) সম্মিলিত হয়ে যায় যা এই পদ্ধতির ভিত্তি। পদ্ধতিটি এই উচ্চতম গুণগুলির দ্বারা পরিচালিত এবং এই বিশ্বের বিকশিত হওয়ার নিদির্ষ্ট নিয়মগুলিই হচ্ছে এর ভিত্তি। মাস্টার লি-র শিক্ষাগুলি অনেক বইতে প্রকাশিত হয়েছে যেগুলির মধ্যে আছে ফালুন গোংগ, জুআন ফালুন,ফালুন দাফার মহান পূর্ণতার পথ, আরও উন্নতির আবশ্যকতা এবং হোংগ য়িন (মহান কবিতাগুচ্ছ)। এগুলি এবং অন্য সব রচনাবলী আট-ত্রিশটিরও বেশী ভাষায় অনূদিত হয়ে ছেপে প্রকাশিত হয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফালুন দাফা সরাসরি মানব মনকে নিশানা করে,পরিষ্কার ভাবে বললে শিনশিংগ-এর সাধনাই হচ্ছে গোংগ (আধ্যাত্মিক শক্তি) বৃদ্ধির চাবিকাঠি। শিনশিংগ যতটা উঁচু হবে গোংগ-এর উচ্চতাও ততটাই হবে। শিনশিংগ -এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সদগুণ (একধরনের সাদা পদার্থ) এবং কর্মের (একধরনের কালো পদার্থ) রূপান্তর। এর মধ্যে আরও আছে সহনশীলতা,বোধশক্তি এবং ত্যাগ, সাধারণ মানুষদের নানান ধরনের আকাঙ্ক্ষা এবং আসক্তি পরিত্যাগ করা, এছাড়া আছে কষ্টের মধ্যে আরও কষ্ট সহ্য করতে পারা, অনেক দিকের জিনিস এর অন্তর্ভুক্ত।
ফালুন দাফার মধ্যে আরও আছে শরীরের সাধনা, এটা শারীরিক ক্রিয়া অনুশীলনের দ্বারা করা হয়। শারীরিক ক্রিয়া একদিকে শক্তিশালী গোংগ সামর্থ্যের দ্বারা অলৌকিক শক্তি এবং শক্তির যন্ত্রকৌশলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,অন্য দিকে শরীরের ভিতরে বিকশিত করে অনেক জীবিত সত্তা। উচ্চস্তরের সাধনায় অমরশিশু একটা সত্তা হিসাবে প্রকটিত হয় এবং অনেক ক্ষমতাও বিকশিত হয়। এই সমস্ত জিনিসগুলি ফালুন দাফার শারীরিক ক্রিয়ার মাধ্যমেই রূপান্তরিত হয়। সামগ্রিকভাবে মন ও শরীরের এই যুগ্ম সাধনা প্রণালীতে আত্মসাধনা এবং শারীরিক ক্রিয়া দুটোরই প্রয়োজন আছে, সেক্ষেত্রে প্রথমে সাধনা, তারপরে শারীরিক ক্রিয়া। শিনশিংগ-এর সাধনা না করে শুধুমাত্র শারীরিক ক্রিয়া করলে গোংগ বৃদ্ধি ঘটবেই না। শারীরিক ক্রিয়া হচ্ছে সাধনায় পূর্ণতা লাভের ক্ষেত্রে এক অনুপূরক পন্থা।
ফালুন দাফায় একটি ফালুন অথবা ধর্মচক্রের সাধনা করা হয়। ফালুন হচ্ছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন পদার্থ দিয়ে তৈরি করা বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এক ঘূর্ণায়মান সত্তা। মাস্টার লি হোংগ জি দ্বারা অনুশীলনকারীর তলপেটে অন্যমাত্রায় স্থাপিত ফালুন প্রতিদিন চব্বিশ ঘন্টা অবিরাম ঘুরতেই থাকে। সত্যিকারের সাধক মাস্টার লি হোংগ জি-র বই পড়ে, ভি.ডি.ও-তে নয় দিনের ভাষণ (লেকচার) শুনে অথবা ফালুন দাফার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একত্রে অধ্যয়ন করে ফালুন পেতে পারেন। ফালুন একজন সাধককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুশীলন করতে সাহায্য করে অর্থাৎ বলা যায় যে ফালুন সর্বদা অনুশীলনকারীকে শোধন করতে থাকে যদিও সে প্রতি মুহূর্তে শারীরিক ক্রিয়া করে না। বর্তমানে পৃথিবীতে জনগণের মধ্যে প্রচলিত সমস্ত সাধনা পদ্ধতিগুলির মধ্যে শুধুমাত্র ফালুন দাফায় এই অবস্থাটা প্রাপ্ত হয় যেখানে ফা অনুশীলনকারীকে শোধন করে।
ঘূর্ণায়মান ফালুনের এই বিশ্বের মতো একই গুণ আছে এবং এটা এই বিশ্বের ক্ষুদ্র সংস্করণ। বুদ্ধমতের ফালুন,তাওমতের য়িন-য়িয়াংগ এবং দশ দিক সম্পন্ন জগতের সবই ফালুনের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। ফালুন ভিতরের দিকে ঘোরার সময়ে(ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী) অনুশীলনকারীকে উদ্ধার করতে সাহায্য করে,যেহেতু এটা বিরাট পরিমাণ শক্তি বিশ্বের থেকে আহরণ করে গোংগ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ফালুন বাইরের দিকে ঘোরার সময় (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে) অন্যদের উদ্ধার করতে সাহায্য করে, কারণ এটা শক্তি নির্গত করে অন্যদের বিপদমুক্ত করে এবং অস্বাভাবিক অবস্থার সংশোধন ঘটায়। এমনকী যে ব্যক্তি সাধকের কাছে থাকে সেও উপকার প্রাপ্ত হয়।
ফালুন দাফা একজন ব্যক্তিকে প্রজ্ঞা অবস্থায় এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থিতিতে নিয়ে আসে। এই পদ্ধতির সঞ্চালনগুলি সুসংবদ্ধ , যেহেতু মহান পথ অত্যন্ত সরল ও সহজ হয়। ফালুন দাফা আট দিক দিয়ে অনন্যসাধারণ:
1. এতে একটা ফালুন-এর সাধনা করা হয়,দ্যানের (আভ্য়ন্তরীণ শক্তিপুঞ্জ) সাধনা করা হয় না।
2. যখন অনুশীলনকারী শারীরিক ক্রিয়া করে না, তখনও ফালুন তাকে শোধন করতে থাকে।
3. এখানে একজন ব্যক্তির মুখ্যচেতনার সাধনা করা হয় এবং সে নিজে গোংগ প্রাপ্ত হয়।
4. মন এবং শরীর দুটোরই সাধনা করা হয়।
5. পাঁচ সেট শারীরিক ক্রিয়া আছে, সেগুলি সরল এবং সহজে শেখা যায়।
6. মনকে কোনো কিছুতে নিবদ্ধ করা হয় না, এখানে বিপথে যাওয়ার ঝুঁকি নেই, গোংগ শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
7. শারীরিক ক্রিয়ার সময়ে কোনো স্থান, সময় ও দিকের কথা বলা হয় না। এছাড়া শারীরিক ক্রিয়া কীভাবে সমাপ্ত করবে সেটাও বলা হয় না।
8. মাস্টার-এর ফা শরীর সুরক্ষা প্রদান করে এবং সেইজন্য খারাপ আত্মাকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।
ফালুন দাফার শিক্ষা প্রচলিত অন্য সব অনুশীলন পদ্ধতি এবং দ্যান (আভ্য়ন্তরীণ শক্তিপুঞ্জ) সাধনার বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির থেকে পুরোপুরি আলাদা।.
ফালুন দাফার অনুশীলন একেবারে প্রথমেই উঁচুস্তর থেকে শুরু হয়। যাদের পূর্বনির্ধারিত সম্পর্ক আছে অথবা যারা বহু বছর ধরে সাধনা করছে অথচ গোংগ বৃদ্ধি হয়নি, তাদের জন্য প্রদান করা হচ্ছে। সবথেকে সুবিধাজনক, সবচেয়ে দ্রুত উন্নতিশীল,সবথেকে ভালো আবার সবথেকে কঠিন হচ্ছে এই সাধনা পদ্ধতি।
সাধকের গোংগ সামর্থ্য এবং শিনশিংগ একটা বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়ার পরে এই পার্থিব জগতে থাকা অবস্থাতেই সে অবিনাশী এবং বজ্রশরীর প্রাপ্ত হয়, তার গোংগ উম্মুক্ত হয়ে যায় এবং সে আলোকপ্রাপ্তঅবস্থা লাভ করে, পুরো শরীরের উচ্চ স্তরে উত্তরণ হয়। অত্যন্ত দৃঢ় সংকল্পযুক্ত ব্যক্তিরা এই সব শিক্ষা শিখে অবশ্যই সফলতা লাভ করবে, তারা শিনশিংগ উন্নত করে এবং আসক্তিগুলোকে দূর করে সাধনায় সম্পূর্ণতা অর্জন করবে।
তোমরা এটাকে মূল্যবান মনে করবে - বুদ্ধ ফা তোমার সামনেই রয়েছে।